ads

Wednesday, November 6, 2024

সালাত কবুল না হওয়ার কারণ — সালাত ভঙ্গের কারণ


আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। সালাত কবুল না হওয়ার কারণ—সালাত ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে আজকের আমরা আলোচনা করব। মুসলমানদের জন্য ইসলাম ধর্মের একটি ফরজ বিধান হলো সালাত , প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে মুসলমানদের সালাত আদায় করতে হয় । সালাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নৈকট্য লাভের সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হচ্ছে সালাত। মুসলমানদের সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে সালাত। সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে খুশি করার অন্যতম উপায়। সালাত আমাদের সঠিক নিয়মের আদায় করতে না পারলে সালাত কবুল হয় না । ফলে আমাদের সঠিক নিয়মে সালাত আদায় করতে হবে। ফলে আমরা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে খুশি করতে পারব। সঠিক ভাবে সালাত আদায়না করলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার আমাদের উপরে নারাজ হবেন। ফলে সালাত কবুল হয় না। আমাদের সালাত ভঙ্গের কারন গুলো খুঁজে বের করা দরকার এবং আমাদের জানতে হবে সালাত ভঙ্গের কারন গুলো কী কী.? আজকের মূলবিষয় বস্তুু হলো, সালাত কবুল না হওয়ার কারণ ও সালাত ভঙ্গের কারন কী কী..?


সালাত কবুল না হওয়ার কারণ ও সালাত ভঙ্গের কারণ


সালাত (নামাজ) ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আমাদের আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং জান্নাতে প্রবেশের চাবিকাঠি। কিন্তু অনেক সময় আমাদের সালাত কবুল হয় না বা বিভিন্ন কারণে তা ভঙ্গ হয়ে যায়। আসুন, কুরআন ও হাদিসের আলোকে সালাত কবুল না হওয়ার কারণ এবং সালাত ভঙ্গের কারণগুলো জেনে নিই।






🔹 সালাত কবুল না হওয়ার কারণ


অনেক সময় আমরা সালাত আদায় করি, কিন্তু তা কবুল হয় না। কেন? কারণ আল্লাহ তায়ালা কেবল সে সালাত কবুল করেন, যা শুদ্ধভাবে ও একাগ্রতার সঙ্গে আদায় করা হয়। কিছু প্রধান কারণ নিচে দেওয়া হলো—


১. খুশু-খুজু (একাগ্রতা) না থাকা


🔸 আল্লাহ বলেন:

❝নিশ্চয়ই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা তাদের সালাতে বিনম্র ও একাগ্রচিত্ত।❞ (সূরা আল-মুমিনুন: ১-২)


যদি আমরা নামাজে মনোযোগ না দিই এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর অনুভূতি না রাখি, তাহলে সেই সালাত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা কম।


2. হারাম উপার্জন ও খাবার গ্রহণ করা


🔸 রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

❝যে ব্যক্তি হারাম খায়, হারাম পোশাক পরে এবং হারাম উপার্জন করে, তার দোয়া কবুল হয় না।❞ (মুসলিম)


সুতরাং, যদি আমরা হারাম উপার্জন থেকে খরচ করি, তাহলে আমাদের সালাত ও দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।


৩. সালাত বিলম্ব করা বা অলসতা করা


🔸 আল্লাহ বলেন:

❝অতএব দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে উদাসীন।❞ (সূরা মাউন: ৪-৫)


যারা সালাতকে গুরুত্ব দেয় না, অলসতা করে দেরি করে পড়ে, তাদের সালাত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা কম।


৪. ভুলভাবে সালাত আদায় করা


🔸 রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

❝এক ব্যক্তি সালাত পড়ল, কিন্তু তা ভুলভাবে পড়ার কারণে তিনি বললেন, ‘তুমি আবার সালাত পড়ো, কারণ তুমি সালাত পড়োনি।’❞ (বুখারি)


যদি কেউ রুকু-সিজদা সঠিকভাবে না করে বা অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করে, তাহলে সেই সালাত শুদ্ধ হয় না এবং কবুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।


৫. অহংকার ও গাফিলতি


🔸 রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

❝যে ব্যক্তি রিয়া (লোক দেখানো) করে নামাজ পড়ে, তার নামাজ কবুল হয় না।❞ (আবু দাউদ)


যদি আমরা মানুষকে দেখানোর জন্য সালাত আদায় করি, তাহলে তা কবুল হয় না।



---


🔹 সালাত ভঙ্গের কারণ


সালাতের মধ্যে কিছু কাজ করলে তা ভঙ্গ হয়ে যায়। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো—


১. সালাতের মধ্যে কথা বলা


🔸 রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

❝সালাতের মধ্যে দুনিয়াবি কথা বলা বৈধ নয়।❞ (মুসলিম)


সালাতের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বললে তা বাতিল হয়ে যায়।


২. হাসা বা উচ্চ স্বরে কাঁদা


🔸 সালাতে উচ্চ স্বরে হাসলে তা ভেঙে যায়।

🔸 তীব্র আবেগের কারণে উচ্চ স্বরে কাঁদলেও সালাত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।


৩. বিনা প্রয়োজনে বেশি নড়াচড়া করা


🔸 যদি কেউ সালাতের মধ্যে অনর্থকভাবে বারবার নড়াচড়া করে, তাহলে তার সালাত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।


৪. সালাতের মধ্যে খাওয়া বা পান করা


🔸 সালাতের সময় কোনো কিছু খাওয়া বা পান করলে তা ভঙ্গ হয়ে যায়।


৫. ওযু ভেঙে যাওয়া (যেমন গ্যাস বের হওয়া, ঘুমিয়ে পড়া, পেশাব বা পায়খানার প্রয়োজন অনুভব করা)


🔸 রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

❝ওযু ছাড়া কোনো সালাত কবুল হয় না।❞ (মুসলিম)


৬. কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া


🔸 ইচ্ছাকৃতভাবে কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সালাত ভঙ্গ হয়ে যায়।


৭. নামাজে কোনো ফরজ বা ওয়াজিব কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া


🔸 রুকু, সিজদা বা তাকবির না করলে সালাত শুদ্ধ হবে না।



🔹 উপসংহার


সালাত কবুল হওয়ার জন্য আমাদের একাগ্রতা, শুদ্ধতা এবং আন্তরিকতা থাকা জরুরি। হারাম থেকে দূরে থাকা, সময়মতো সালাত আদায় করা ও ভুলত্রুটি সংশোধন করা আমাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি, সালাতের মধ্যে এমন কিছু করা যাবে না, যা সালাত ভঙ্গ করে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ ও কবুলযোগ্য সালাত আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন!

No comments:

Post a Comment